৩ রা নভেম্বর জেল হত্যা দিবস
বাঙালী জাতির ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর দিন…
৩ রা নভেম্বর জেল হত্যা দিবস।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার পর জাতির ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায়।
১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তিন মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ,এ এইচ এম কামরুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী কে এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
জাতি আগামীকাল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ,বীর সেনানী জাতীয় চার নেতা কে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের ইতিহাস এর অন্যতম বর্বরোচিত এই কালো অধ্যায়টি কে স্মরণ করবে।
বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সবচাইতে ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক হিসেবে পরিচিত এবং তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোস্তাক ও ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ মেজর জিয়া এবং বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি কর্ণেল (অব:) সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লে. কর্ণেল (অব:) খন্দকার আব্দুর রশিদ জেলখানায় জাতীয় চার নেতা কে হত্যার পরিকল্পনা করে। এ কাজের জন্য তারা আগে ভাগে একটি ঘাতক দলও গঠন করে। এ দলের প্রধান ছিলো রিসালদার মোসলেহ্ উদ্দীন ।সে ছিলো ফারুক এর সবচেয়ে আস্থাভাজন অফিসার ।১৫ আগস্ট শেখ মনির বাসভবনে যে ঘাতক দল টি হত্যাযজ্ঞ চালায় সেই দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিলো মোসলেহ্ উদ্দীন ।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রখ্যাত সাংবাদিক
অ্যান্থনি মাসকারেনহাস তার “ বাংলাদেশ অ্যা লিগাসি অব ব্লাড “ গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে সপরিবারে হত্যার পরপরেই জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা টি এমনভাবে নেওয়া হয়েছিলো পাল্টা অভ্যুথান ঘটার সাথে সাথে আপনা আপনি এটি কার্যকর হয়।আর এ কাজের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি ঘাতক দলও গঠন করা হয়।
ঘাতক দলের প্রতি নির্দেশ ছিলো পাল্টা অভ্যুথান এর সাথে সাথে কোন নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে তারা জাতীয় চার নেতা কে হত্যা করবে ।
পঁচাত্তর এর ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ পাল্টা অভ্যুথান ঘটানোর পরেই কেন্দ্রীয় কারাগারে এই জাতীয় চার নেতা কে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ দিনগত রাত ১২ টা ১৭ মি অর্থাৎ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ঐতিহাসিক ধানমণ্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে ।
পরে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধকালে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের সমধিক পরিচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমেদ একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কোটি কোটি বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর অপর ঘনিষ্ঠ সহযোগি এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
গোলাম মুর্শিদ তার “মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর “ গ্রন্থে লিখেছেন জিয়া-মোস্তাক জেল হত্যার পরিকল্পনা করেছিলো কেবল ফারুক আর রশিদ কে নিয়ে।
পঁচাত্তর এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে সপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতা হত্যার তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিলো লন্ডনে ।১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয় ।তবে, সেই সময়ে বাংলাদেশ সরকারের অসহযোগিতার কারণে এবং কমিশনের একজন সদস্যকে ভিসা প্রদান না করায় এ উদ্যোগ টি সফল হতে পারেনি।সে সময়ে বাংলাদেশ সরকার প্রধান ছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
অধ্যাপক আবু সাইয়িদের “বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ফ্যাক্স এন্ড ডকুমেন্টস” গ্রন্থে এই কমিশন গঠনের বর্ণনা রয়েছে। এতে বলা হয় , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর দুই কন্যা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা , এম মনসুর আলীর পুত্র মুহাম্মদ সেলিম এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম এর পুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এর আবেদন ক্রমে স্যার থমাস উইলিয়ামস , কিউ. সি. এমপির নেতৃত্বে এই কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই সময় বাংলাদেশ ও বিদেশে অনুষ্ঠিত জনসভাসমূহে এ আবেদন টি ব্যাপকভাবে সমর্থিত হয়েছিলো।
সকলের বিদেহী আত্মার প্রতি মাগফেরাত কামনা করি। আল্লাহ তাদের জান্নাত নসিব করুন।
—— বীর মুক্তিযোদ্ধা
আলহাজ্ব মোঃ জয়নাল আবেদীন খান
সাবেক এম,পি-৭৩ মেহেরপুর-১
647 total views, 1 views today