স্মৃতি বড় মধুর
স্মৃতি বড় বেদনার ……
বিরল এই মুহূর্তটি ২৮ বছর আগের। ১৯৯৪ সালের। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সম্মানে রাজধানীতে এক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। আমন্ত্রণ পেয়ে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী জোহরা তাজউদ্দীন আর শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। পঁচাত্তরে পুরো পরিবার হারানো বঙ্গবন্ধুকন্যা এই দুই মহীয়সী নারীর আজীবন স্নেহধন্য ছিলেন। তাঁদের সান্নিধ্যে তাই যেন উচ্ছ্বসিত শেখ হাসিনা! আর নবীণ-প্রানে দুই প্রানপ্রদীপের সপ্রশংস অভিব্যক্তি যেন মানবিক সম্পর্কের এক অনুপম ব্যঞ্জনা!
যদি লক্ষ্য থাকে অটুট! কোন বাধাই অনতিক্রম্য নয়
————-
কোন বাধাই অনতিক্রম্য নয়, যদি লক্ষ্য থাকে অটুট! জরা তো নয়ই, মরণব্যাধিও বিচ্যুতি ঘটায় না কর্তব্যনিষ্ঠায়! এই মহৎ বার্তাই জাতিকে দিয়ে গেছেন জোহরা তাজউদ্দীন ও জাহানারা ইমাম।৭৫ (পঁচাত্তর)-পরবর্তী বিভ্রান্ত আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন জোহরা তাজউদ্দীন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ৩রা নভেম্বর কারাগারে নির্মম হত্যাযজ্ঞে প্রাণহারানো জাতীয় চার নেতার একজন- তাজউদ্দীন আহমদের সহধর্মিনী ছিলেন তিনি। দলে ঐক্য ফেরানোর তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় এক অনিবার্য পরিণতির মতই যেন কাণ্ডারি হয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ই মে স্বজনের রক্তেভেজা স্বদেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। হাল ধরেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের।
লোকদেখানো দায় সারেননি জোহরা তাজউদ্দীন। নিভৃতচারী ছিলেন আর ছিলেন এক গভীর দায়িত্ববোধে তাড়িত। বয়সকে বাধা মানেননি, দলকে গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্বদানের যোগ্য করে তুলতে গভীর মমতায় পাশে থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে সহযোগিতা করে গেছেন। সংকটে জুগিয়ে গেছেন এগিয়ে যাবার সাহস। সেনাছাউনি তে অবরুদ্ধ বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সেই সাহসই জাতির মর্মমূলে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
সময় যেন এক বহতা নদী! কিন্তু তাতে যে ভেসে যায় না এই গাঙ্গেয় বদ্বীপের যাবতীয় সংকট, স্পর্শকাঁতর সব জিজ্ঞাসা! বাংলাদেশকে তাই এক গুরুদায়িত্ব পালনে ঐক্যবদ্ধ করতে পথে নামেন একাত্তরে শহীদ এক গেরিলা যোদ্ধার মা। পরাজিত পাকিস্তানিদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের মুখোশ উন্মোচনের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্রে জেঁকে বসা সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে অদম্য হয়ে ওঠেন কান্স্যারের সঙ্গে যুঝতে থাকা জাহানারা ইমাম। শহীদ জননীর প্রাণের আহবানে প্রজন্মের বুকে সঞ্চারিত হয় সেই সাহসী বার্তা।
স্বৈরশাসনের অবসান ঘটলেও তখন চলছে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামাতের আঁতাতে দানব হয়ে ওঠা বিএনপির অপশাসন। যুগসন্ধিক্ষণে এক চরম প্রশ্নের মুখে যখন বাংলাদেশ, ‘প্রিয় খালাম্মা’র পাশে তখন বলিষ্ঠভাবে দাঁড়িয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এক অভূতপূর্ব জাতি জাগরণের সেই সূচনাপর্বে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা পুনর্প্রতিষ্ঠায় সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশেনা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনাই।
বিস্মৃতিপ্রবণ জাতির চেতনায় সুগন্ধি ধূপের মতো সুবাস ছড়িয়ে বাংলাদেশকে যেন প্রবলভাবে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন জোহরা তাজউদ্দীন ও জাহানারা ইমাম।আর গণমানুষের মনস্তত্ত্বে এই দুই মহীয়সীর তোলা সেই আলোড়ন বাস্তব প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে সফল পরিণতি পেয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতে। আজকের বদলে যাওয়া বাংলাদেশের এ যেন গভীর গোপণ এক সমীকরণ! কালের স্রোতে মানবমুক্তির সাহসীবার্তার স্বর্ণপ্রসবিনী এক পরিভ্রমণ!
———— বীর মুক্তিযোদ্ধা
আলহাজ্ব মোঃ জয়নাল আবেদীন খান
সাবেক এম,পি-৭৩ মেহেরপুর-১
208 total views, 1 views today