স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ কর, দুর্নীতিবাজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী-স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লুটপাট-সিন্ডিকেটের হোতাদের এবং সকলের জন্য বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার ও চিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ১৪ জুলাই সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে পল্টন মুক্তাঙ্গন হয়ে জিরো পয়েন্টে পুলিশের ব্যারিগেট ভেঙে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময়ে পুলিশ বাধা উপেক্ষা করে সচিবালয় সামনে প্রগতিশীল সংগঠনের নেতা-কর্মীরা রাস্তা অবরোধ করেন।
পরে ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আনোয়ার হোসেন রেজার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কৃষক সমিতির সহ-সভাপতি নিমাই গাঙ্গুলী, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, যুব ইউনিয়ন প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. সাজেদুল হক রুবেল, সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল, কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা মানবেন্দ্র দেব, ট্রেড ইউনিয়ন কার্যকরি সভাপতি রুহুল আমিন, গামেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা সাদিকুর রহমান শামীম, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্টের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী রাসেদুল হাসান রিপন। সমাবেশটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত মানুষের জীবন। মানুষের জীবন বাঁচাতে সরকারের ন্যূনতম প্রস্তুতিও নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেবল চাপাবাজি আর মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছেন। আর ব্যস্ত আছেন নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা ও সমন্বয়হীনতা পাহাড় সমান। প্রথম থেকেই দেখা গেল এন-৯৫ মানের মাস্ক উৎপাদনে দুর্নীতি হয়েছে। এ দুর্নীতির সাথে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকসহ মন্ত্রীর কাছের মানুষরা জড়িত। এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেসব চিকিৎসক কথা বলেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদেরকে শাস্তি দিয়েছে। এছাড়া এ মুহূর্তে সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজন বেশি বেশি পরিমাণ টেস্ট করা। কিন্তু আমরা জানি, বিভিন্ন জেলায় টেস্ট কিটের অভাবে পরীক্ষা বন্ধ থাকছে বিভিন্ন জেলায়। হাসপাতালগুলোতে নেই দক্ষ চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী। হাসপাতালগুলোতে নেই পর্যাপ্ত আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা। অক্সিজেন সিলিন্ডার গ্যাসের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। মানুষের অসহায়ত্ব সকল মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
বক্তারা আরও বলেন, এই মহামারির সময়েও থেমে নেই চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে ব্যবসা। নিম্নমানের মাস্ক-পিপিই সরবরাহ করে টাকা লুটে নিচ্ছে সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে শুনে আসছি, মিঠু সিন্ডিকেটের কথা। কে এই মিঠু সিন্ডিকেট? এ সিন্ডিকেট ভাঙা হচ্ছে না কেন? কারণ এর সাথে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং তার আত্মীয়-স¦জন জড়িত। আরো জড়িত আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ আরো অন্যান্য কর্মকর্তারা। দেশের চিকিৎসক-নার্স- স্বাস্থ্যকর্মীরা সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাবে মারা যাচ্ছেন। চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা যখন পিপিইয়ের অভাবে সম্মুখযুদ্ধে মারা যাচ্ছেন, তখন বেক্সিমকো গ্রæপ ৬৫ লাখ পিস পিপিই ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি করে। এই হলো মুনাফাকেন্দ্রিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আসল চিত্র।
বক্তারা বলেন, সরকারের দেয়া তথ্যের চেয়ে সংক্রমণের বাস্তব চিত্র বহুগুণ বেশি। এসব নিয়ে কথা বললেই চলছে গ্রেফতার-নির্যাতন। এই অবস্থায় প্রয়োজন ছিল মানুষের ঘরে-ঘরে খাদ্য পৌঁছে দিয়ে লকডাউন জোরদার করা। কিন্তু তা না করে জাতীয় স্বার্থের কথা বলে পুঁজিপতিদের স্বার্থে লকডাউন তুলে দেয়া হলো। লাখো-কোটি মানুষকে মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হলো। সরকার শুধু জিডিপির কথা বলছে। কিন্তু এই জিডিপি’র মধ্যে মানুষ নেই এবং তা নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনকে রক্ষা করছে পারছে না।
এসময় সকলের জন্য সরকারি উদ্যোগে চিকিৎসা নিশ্চিত করা, প্রতিটি জেলা শহরে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটর মেশিন ও আইসিইউ সাপোর্টসহ ৫০০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা সকল হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ও অক্সিজেন সিলিন্ডারের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে অধিগ্রহণ করে করোনা চিকিৎসা চালু করার দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল সংগঠনসমূহের নেতারা।
547 total views, 1 views today