সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়েছে। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এই বিজ্ঞপ্তিটি এসেছে।
চলতি বছর সুপ্রিম কোর্টের ক্যালেন্ডারে ৩১ আগস্ট থেকে সাপ্তাহিক ছুটিসহ পুরো সেপ্টেম্বর মাসে অবকাশকালীন ছুটি ছিল।
অক্টোবরের প্রথমে সাপ্তাহিক ছুটিসহ ১ থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবকাশের পর মাসের শেষ দিকে ২৩ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত আবার টানা পাঁচদিনের ছুটি ছিল।
১ নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাপ্তাহিক ছুটির বাইরে একদিন সরকারি ছুটি রয়েছে ক্যালেন্ডারে।
এরপর সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ১৮ ডিসেম্বর থেকে বছরের শেষ দিন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীর ছুটির ঘোষণা ছিল।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে মার্চ থেকে এক মাসের বেশি সময় আদালত সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় অবকাশকালীন ছুটি বাতিলের আহ্বান জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গত ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত সব বিচারপতিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় তা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
“গত ০৬/০৮/২০২০ খ্রিস্টাব্দ রোজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ ঘটিকায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের মাননীয় বিচারপতি মহোদয়গণের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ফুলকোর্ট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের ২০২০ খ্রিস্টাব্দের বর্ষপঞ্জির ০৬/০৮/২০২০ খ্রিস্টাব্দ অবকাশকালীন ছুটিসমূহ বাতিল করা হল।”
নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে ছুটি ঘোষণা করে। তখন দেশের সব আদালতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টও।
সরকারের সাধারণ ছুটির সাথে আদালতের সাধারণ ছুটিও কয়েক দফা বাড়ানো হয়।
সর্বশেষ গত ১৬ মে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।
তবে এই পরিস্থিতিতে ‘ভার্চুয়াল আদালতে’ শুনানির জন্য গত ৯ মে সরকার ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার’ অধ্যাদেশ জারি করে; সংসদ যেটিকে পরে আইনে পরিণত করেছে।
পরদিন সর্বোচ্চ আদালতের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে ‘ফুলকোর্ট’ সভা করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
ফুলকোর্ট সভার পর ওইদিনই অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল জামিন শুনানির নির্দেশ আসে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে। তার জন্য তিনটি বিশেষ প্র্যাকটিস নির্দেশনাও জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
তার মধ্যে আপিল বিভাগ পরিচালনার জন্য্ ১৩ দফা, হাই কোর্ট পরিচালনার জন্য ১৫ দফা ও অধস্তন আদালত পরিচালনার জন্য ২১ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এই ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’র আলোকেই ১১ মে থেকে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের অধস্তন ও ১২ মে থেকে উচ্চ আদালতে বিচারকাজ শুরু হয়।
সরকার ৩০ মে পর সাধারণ ছুটি আর না বাড়ালেও ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে চলছিল দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকাজ।
পরে গত ৩০ জুলাই অধস্তন আদালতে শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে স্বাভাবিক বিচারকাজ পরিচালনার সিদ্ধান্ত আসে প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চার মাস পর গত ৫ আগস্ট থেকে দেশের অধস্তন আদালতে শুরু হয় স্বাভাবিক বিচারকাজ।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে হাই কোর্টে বিচারকাজ
এর মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে অবিলম্বে নিয়মিত আদালত চালুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিচারপতির কাছে গত ৮ জুলাই প্রস্তাব করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বাৎসরিক ছুটিসহ সব আদালতের ডিসেম্বরের ছুটি বাতিলের দাবিও জানানো হয়।
পরে ২৬ জুলাই প্রধান বিচারপতির কাছে আবারও সেই প্রস্তাব পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীও দাবি তোলেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে নিয়মিত আদালত চালু করার।
পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত ৬ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ফুলকোর্ট সভা করেন সর্বোচ্চ আদালতের উভয় উভয় বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে।
সে সভার পর গত ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সাথে মতবিনিময় বৈঠক করেন প্রধান বিচারপতি।
সে সভায় নিয়মিত বেঞ্চ চালুর বিষয়ে আলোচনার পর ১০ আগস্ট ভার্চুয়াল বেঞ্চের পাশাপাশি নিয়মিত বেঞ্চ গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি।
এরপর ১২ আগস্ট থেকে ভার্চুয়াল বেঞ্চের পাশাপাশি নিয়মিত বেঞ্চে চলছে উচ্চ আদালতের বিচারকাজ।
615 total views, 1 views today