এখানে আলোচনা না আসলে বোঝা দরকার কবিতার পাঠক যেমনি হোক তাদের আধুনিকতার ছোঁয়া দিতে গিয়ে সমালোচনায় নিয়ে আসা ঠিক না।
মারজুক রাসেল অনেক বড় মাপের মানুষ। তার কোন গান মানুষ খারাপ ভাবে নেয় নাই।
গানের কথায় যদি শালীনতার দরকার হয়। তাহলে কবিতায় কেন নয়।
গানের কথায় নিম্ন শ্রেনির মানুষের কথা কেন নাই।
*মান্নান মিয়ার তিতাস মলম।*
লেখক ও পরিচালক ফারুকী পরিচালিত নাটকের ফ্লো ধরে তার লেখা আর ট্রেন্ড ফলো করে অনেক আগের লেখা এ কবিতা গুলো।
নতুন করে ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে।
এখানে তার নিজের আর নাটকের চাহিদা মত কবিতাকে ছকে ফেলতে গেলে হবে না।
কবিতা কোন ডায়লগ নয়।
এখানে নিজের অভিনয় ফাহামি, ফারুকি ওনাদের নাটকের ঢং দিয়ে দোকান পাতি খুলে বসলে হবে না।
নতুন রা কি শিখবে।
”টেলিভিশনে সবার সামনে গিয়া কইবো আরে কবিতাগুলোতে অনেক আগের পিনিক ছিলো আমি শুধু নতুন করে বানাইছি। ”
আমার তোমার আমাদের মা বাবারা কি শিখবে কি জানবে এসব থেকে।
মিডিয়া আর জীবন এক না!
তেমনি সমাজ আর সাহিত্য এক না।
আমরা চাইলেও সাহিত্যে সব কিছু এ্যাপলাই করতে পারি না।
“কারন সাহিত্য টা কারো একার বাপের সম্পত্তি না”
এমন করে চাইলে বলা যাবে না।
বলতে হবে সাহিত্য টা কারো একার জন্য না সাহিত্য আমাদের সবার।
একটা সার্বজনীন সম্পত্তিকে চাইলেই নিজের জনপ্রিয়তা দিয়ে কাটাছেঁড়া করা যায়।
যখন কোন গুরুত্বপূর্ন কেউ কিছু বলবে তাদের সার্বজননীন ভাবে বলা লাগবে।
সাহিত্যটা তো আর নাটক, সিনেমা, না যে নোংরা কোন দৃশ্যে নোংরা কোন অধ্যায় চলছে।
অনেক ভাবতে হবে। অনেক কিছু ভেবে নিয়ে বলতে হয় কিছু বলতে গেলে।
অল্প জেনে মহিত হওয়ার কিছু নেই। অনেক কিছু বলার আছে এগুলো নিয়ে।
খুব অল্পতে বলতে গেলে।
তরুন সমাজের যেই অবস্থা নিজের শেকড় নিজের সংস্কৃতি আর সাহিত্য থেকে দূরে থেকে চলছে নেশা আর পটপরিবর্তনের দিকে তাদের জন্য দোকানপাট খুলে ব্যবসা করলে চলবে না।
নিজের পেট চালানোর জন্য কবিতা গল্প আগেও অনেক সাহিত্যিক চর্চা করেছেন।
এক প্রজন্মের ব্যবধানেও নয়।
এই এতটুকু সময়ে সাহিত্যে এ সকল ধর মার কাট টাইপ কবিতা দিয়ে, পরিবর্তন আর আধুনিকতার প্রদর্শক ভাবলে চলবে না।
এক সময় না হলে যত জনপ্রিয়তা পাক না কেন দিন শেষে অনেকেই বলবে;
ও ওর অশ্লিল আর ফালতু শব্দগুলোর জন্য জনপ্রিয়।
*ও ও ই অনেকেই হয়তো বলবে*
কিন্তু তা আমাদের সাহিত্যর জন্য খারাপ।
কারন আমাদের শ্রদ্ধেও গুরুজন, কবি গুরু আর মহিত সকলে যখন।
সাধু চলিত আর প্রমিত নিয়ে কথা বলেছেন। তখন আমরা সাহিত্য কি তা জেনেছি, জানছি।
সাধারণ মানুষের কথা কবিতায় থাকবে না বলতে গেলে।
সাধারণ মানুষের চলিত শব্দকথা সাহিত্যে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অনেক বাধ্যগতা আর পরিমার্জনার কথা সব বড় বড় সাহিত্যকরা আলোচনা করতেন।
তাই এই জন্য সবকিছু ভেবে নিয়ে নতুন কিছু করতে হয়।
জনপ্রিয়তা তা গুরুজন দের কথা ভুলে গিয়ে, তাদের সত্যি টাকে নতুন কবি নতুন পাঠকদের কাছ থেকে আড়াল করার কিছু নেই।
সাহিত্য অনেক গভীর অনেক ব্যাপক আর খুব স্পর্শকাতর।
আর আজ আমারা সহনশীল একটা সাহিত্য পরিবেশে আছি।
আমাদের আগামী প্রজন্ম কে কি হাতে দিয়ে যাচ্ছি।
কি অর্জন গুলো তুলে দিয়ে যাচ্ছি।
গুরুজনদের চলার পাথেয়, তাঁরা যা দিয়ে গেছে তা তারা ভেবেছিলো এক শতাব্দীর থেকে অন্য শতাব্দীর প্রজন্ম বহন করুক।
বোঝাতে পেড়েছি। সহজ আর স্বাভাবিক না।
না হলে মারজুক রাসেলের কবিতা হয় খেয়ে পড় না হলে খেয়ে ফলো কর।
প্রসঙ্গক্রমে।
আবৃত্তি দিয়ে শ্রুতিমধুর করে তোলা অবশ্যই ভালো। কিন্তু আবৃত্তি আর কবিতা দুটির মধ্যে একটা সাদৃশ্য আছে। দুটি, দুটি শিল্পের কাজ।
অনেক কবি সাহিত্যিক অনেক জায়গায় বারবার বলেছে শিল্প আর সাহিত্য এক নয়। শিল্প আর সাহিত্য দুটি আলাদা বিষয়।
সাহিত্য শিল্প দিয়ে তৈরী শিল্প আর সাহিত্য দুটি আলাদা শব্দ।
এখানে কোন কিছু সাহিত্যের বিষয় হতে গেলে তা; পরিপূর্ণ তা দরকার। সাহিত্য শিল্পের খোরাক শিল্প নয়।
সার্বজনীন কোন কিছু শিল্পে রুপান্তরিত করার আগেই তাকে সুন্দর আর সাবলিল ভাবে তুলে ধরতে হবে। না হলে তা ভালো সাহিত্য হবে না।
আর সাহিত্য কে আবৃত্তি আর কথার ছকে ফেলে আবেগের মাত্রা ব্যবহার করে যদি সম্পূর্ণতা দিতে হয় তাহলে সেটা শিল্পের জন্যই ভালো।
কোন শিল্পকে কেন্দ্র করে কখনও সাহিত্য পরাভূত হলে চলবে না।
সাহিত্য নদীর মতন সমুদ্রে গিয়ে মিশবে। এটাই স্বাভাবিক।
তবে সমুদ্র এসে নদীর সাথে মিশবে না।
সাহিত্যকে সুন্দর ভাবে বোঝানোর জন্য শিল্পের দরকার হয়। যেমন নাটক সিনেমা আবৃত্তি।
কিন্তু সেগুলোর জন্য র’মেটেরিয়াল টাকে প্রাঞ্জল হতে হবে, তা আবশ্যিক।
সেটা থেকে প্রকৃত রূপায়ণ করার ক্ষেত্রে মুল সাহিত্য কে ঠিক রেখে, রুপদান করা লাগবে। এক্ষেত্রে সাহিত্য কে আপাদ দৃষ্টিতে যদি শিল্পের উপরে ডিপেন্ড করতে হয় তাহলে তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত।
অল্প বলতে গেলে বলি।
কথাকে সুন্দর ভাবে তুলে ধরলে তা সুন্দর হয়ে যায় কি?
সাহিত্যের উপাদানকে আবেগ দিয়ে বাজারজাতকরণের এ এক নতুন অপচেষ্টা ছাড়া কিছু না।
একারনে লেখক দায়বদ্ধ। পরিবেশ সৃষ্টি আর ধারা সৃষ্টি করা একক কারে উপরে বর্তায় না।
লেখকরা সবসময় সমাজের কাছে দায়বদ্ধ থাকে কারন আমাদের সমাজ লেখক আর তাঁদের ‘শিল্পের’ থেকে অনেক কিছু নেয়।
এর জন্য লেখক দায়ী থাকে।
নিজের শিল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করা নিজের আত্মাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতই।
অতীতে অনেকে সমালোচনা আলোচনায় থাকবার জন্য ‘ধর্ম’ ‘নারীবাদী’ বিষয় গুলোকে হাতিয়ার করেছে। করছেন এখনো।
আর সেখানে ‘অশ্লিলতা’ সেটা কিছু না।
অনেকে আবার ব্যাক্তিগত দর্শন কে পুঁজি করে আজীবন নিজেকে বিকিয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত ‘অমিত’ হওয়ার থেকে ‘গোঁড়া’ হওয়া অনেক ভালো।
গোঁড়ামি করা শ্রেয় সেটা যুগের বিপক্ষে গিয়ে হলেও নিজের জন্মদাতা পিতার দর্শন ভালো না হলেও তাকে সম্মান করা ভালো কিন্তু তা আঁকড়ে ধরা ভালো না ।
আমরা অনেক ‘অমিত’ সমকালিন সদ্য জনপ্রিয় কবি দেখেছি। যে পরে বদলালো কিনা তা আবশ্যিক নয়।
কিন্তু একজন ‘গোঁড়া’ যে গোঁড়ামি করতে করতে বিদায় নিলো সব জগৎ থেকে। সে কি করলো কতটা করলো। সেটা খুব দরকার।
তাকে নিয়ে না ভাবলেও আমরা তার কাজের তার মূল্যবোধের সুফলতা ভোগ করি একটা লম্বাসময় ধরে।
তার পর আমাদের সমাজ একটা অর্ধ শতাব্দী নিজের গোড়াপত্তন থেকে নিজেকে রক্ষা করে। এখানে নিজের শিকড় আঁকড়ে ধরে যারা থাকে তারাই ‘অমিত’ হয়।
কিন্তু আমাদের কি গোঁড়া হওয়াটার প্রয়োজন নেই।
লেখক — নিপুন নগরী
246 total views, 1 views today