বৈশাখী স্মৃতি।
গতকালের ঝড়ের দাপটে হারিয়ে গিয়েছে
আমার সতেরো’তম বৈশাখী ‘সুখ’
নিরেট আঁধার হাতে নিয়ে
কোন কেরাসিন কুপী জ্বলা সন্ধ্যায়
হারিয়ে গেছে আমার সকল মোমেরপুতুল!
পড়ার টেবিলে তখনও লুন্ঠন জ্বলছিল, শুধু
অল্প আলোর ফিরিস্তি গুনেছিল,
ছেড়া বইগুলোর নতুন কাগুজে বর্ডার
তকতকে নতুন ধুলো জমা–
পুরোনো বইয়ের মালিকানা বদলানো আমার-
সেই পুরনো মনের অসুখ!
এরপর কাল বৈশাখ আবার নতুন ঝড়
নিয়ে ধরা দিলো, সেটা ছিলো আমার-
তিনশো একুশতম ঝড়ের রাত্রির কথা।
নিকষ কালো ঝড়
ভাঙাচোরা টিনের ঘরে সেকি তান্ডব
কোন বাড়ীর গাছের ডাল উড়িয়ে নিয়ে
আমার বলে চালিয়ে দিলো, ঝড়টি!
ঝড় এর আগে অনেক দেখেছি।
কিন্তু আধো ভাঙা অক্ষরের–
রচিত এই আমার সতেরো’তম বৈশাখে
একমাত্র ঝড়ের কবিতা!
এর আগের পুরনো সতেরো টি বৈশাখ
আমি লিখতে পারিনি সাদা পাতায়
কোন কবিতায়
কোন এক বৃষ্টির রাতে ফোঁটা ফোঁটা জল
গড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছে ক্যালেন্ডার
আর লাল-কালো-সবুজ
বৃত্ত ভরাট আনন্দ দিনক্ষণ গুলো
চলে গেছে ফিরে, ঘুরে আসার প্রশ্রয় নিয়ে।
ততদিনে বয়স বেড়েছে ঢেঁড়, খেলনা গাড়ি
আর নতুন ঘড়ি–
পালাবদলে প্যাডেল ঘোরা সাইকেল তুলে
রেখে, হারিয়ে ফেলেছি আমার-
তিনশ উননব্বই তম ঝড়ের স্মৃতি!
হারিয়ে ফেলেছি অনেক মুখস্থ করা
বিদেশী জনপদ
আর ভুলে যাওয়া বিজ্ঞানের নথিপত্র
কত গণিতের সূত্র।
এর পর কোন নিশাচর পাখি, আঙুল
গুনে হিসেব রেখেছি ফেলে আসা
দু’শ উনিশ তম ‘সুখ’
আর নিশাচর পাখির সংখ্যা।
একাকী রাত্রি জাগা; রাত! গুনে রেখেছি
এক হাজার ত্রিশ, একত্রিশ,
সেই পুরনো মনের অসুখ, জমা জলে
ঢেউ তুলে কখনও খরা কি’বা উজানে।
আমার পড়ার টেবিল টা তেমনি আছে
বদলায়নি কিছু, শুধু ইস্কুল, কলেজের
বয়স ধরে রেখেছে পড়ার বইগুলো;
ওদেরও বয়স বেড়েছে
কেউ আজ ওদের ছুঁয়ে দেখে না, সেই
জিওগ্রাফী দাগিয়ে মানচিত্রের কথা
বেমালুম ভুলে বসে আছি, সেই বাঙ্গালি
নদী পথ, বন্দর, বানিজ্য!
পড়ার বইয়ের বদলে–
আজ সুনীল, রুদ্র আর জীবন শাসন করে;
জীবনানন্দ।
আজ আবারো ঝড়ের আদলে ভাঙা
গরীব তেঁতুল গাছটি ঝড় তুলেছে পড়শীর
ভাঙা বাড়ীতে,
কখন সেই ঝগড়াঝাটির কথার ফাঁকে
ঝড়ের কালো মেঘলা আকাশ ঝুকে
এসে বলে গেলো–
কাল আবার আসবো, উড়িয়ে নিয়ে যাবো
তোর একত্রিশ’তম বৈশাখ ।।
দোসরা বৈশাখ-২০২০|
260 total views, 1 views today