পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহের শেষ নেই। সেই প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে চিন্তা করে আসছে। এর ফলে সৃষ্টি রহস্য নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মতবাদ। এই বিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল? এই বিশ্ব কেনই বা সৃষ্টি হয়েছিল? এই বিশ্ব কি নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছিল? নাকি কেউ সৃষ্টি করেছিল। যদি কেউ সৃষ্টি করেই থাকে তবে কেন সৃষ্টি করেছিল? এই সব বিষয় নিয়ে চিন্তাশীল মানুষেরা ভাবতে থাকে। এর ফলে মানুষ অনেক সফলতাও পেয়েছে তবে সেটা আমার মনে হয় চুড়ান্ত সফলতা নয়। আজকে যেটা সত্য মনে হচ্ছে সেটা এক সময় সত্য প্রমাণিত নাও হতে পারে। আমি পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্যকে ৪ টি ভাগে ভাগ করবো। যথা-
১। ধর্মীয় মতবাদ
২। দার্শনিক মতবাদ
৩। প্রাচীন মতবাদ
৪। বৈজ্ঞানিক মতবাদ
প্রথমে আমি ধর্মীয় মতবাদ সম্পর্কে আলোচনা করবো। এখানে বিভিন্ন ধর্মে সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে কি বলেছে সেই বিষয়ে আলোচনা করবো।
বৈদিক ধর্মঃ
বৈদিক ধর্মের বর্তমান নাম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম। মূলত বেদের বিধান মেনে চলার জন্যই বৈদিক ধর্ম বলা হয়। বেদ দুই ভাগে বিভক্ত যথা –
১। মন্ত্র
২।ব্রাহ্মণ
মন্ত্রের সংকলন হচ্ছে সংহিতা।
বেদ মূলত চারখানা যথা –
১।ঋক্
২।সাম
৩।যজুঃ এবং
৪।অথর্ব।
এই চারখানা বেদের নিজস্ব মন্ত্রসংহিতা আছে। আমি এই সমস্ত গ্রন্থ থেকে সৃষ্টি তত্ত্ব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো।
“ইনি প্রথমে ছিলেন হিরণ্যগর্ভা, সর্বভূতের প্রভু। যিনি জগৎ ও আকাশকে ধারণ করে আছেন সেই প্রজাপতির উদ্দেশ্যে আমি এই হবি উৎসর্গ করিলাম। ” (ঋক্ ১০।১২)
নাসদীয় সূক্তে আছে —
“তখন না ছিল সৎ, না ছিল অ-সৎ
না অন্তরীক্ষ, না ব্যোম্
কোথায় কার দ্বারা সকলই ছিল আবৃত, রক্ষিত?
ছিল কি তথা অপার বারিরাশি ।। ১।।
অস্তিত্বহীন মৃত্যু বা অমরত্ব
সৎ ও দীন মাঝে না ছিল ভেদ
স্ব-শাসিত এক স্বাবলম্বী শক্তি
ব্যতীত ছিল না আর কেহই ।। ২।।
আধার ছিল তথা তিমিরাবৃত
বিশ্ব অপার জলময়
মহাশূন্যে তিনি ছিলেন অধিষ্ঠিত
নিজ শক্তিতে বিকাশিত ।। ৩।।
সৃষ্টির সর্ব প্রথম উদ্ভাবন কামনা ;
যা ছিল মনের প্রারম্ভিক বীজ,
ঋষিগণ নিজ হ্রদয়েই
সন্ধান পেলেন তার।
আবিস্কার করলেন
অ-সৎ ও সতের সম্পর্ক ” ।। ৪।।
(চলবে)
লেখক — আতিকুর রহমান
796 total views, 1 views today